সৃষ্টির সময় পৃথিবী ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসপিণ্ড। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়। এই সময় পৃথিবীর বাইরের ভারী উপাদানগুলো এর কেন্দ্রের দিকে জমা হয়। আর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে নিচের থেকে উপরে স্তরে স্তরে জমা হয়। পৃথিবীর এই বিভিন্ন স্তরকে মণ্ডল বলে। উপরের স্তরটিকে অশ্মমণ্ডল বলে। অশ্মমণ্ডলের উপরের অংশ ভূত্বক নামে পরিচিত।
ভূত্বক (Earth's Crust) : ভূপৃষ্ঠে শিলার যে কঠিন বহিরাবরণ দেখা যায় তাই ভূত্বক (চিত্র ৪.১)। ভূঅভ্যন্তরের অন্যান্য স্তরের তুলনায় ভূত্বকের পুরুত্ব সবচেয়ে কম; গড়ে ২০ কিলোমিটার। ভূত্বক মহাদেশের তলদেশে গড়ে ৩৫ কিলোমিটার এবং সমুদ্র মহুলশীর যুবক, তলদেশে তা গড়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পুরু। সাধারণভাবে মহাদেশীয় ভূত্বকের এ স্তরকে সিয়াল (Sial) স্তর বলে, যা সিলিকন (Si) ও অ্যালুমিনিয়াম (AI) দ্বারা গঠিত, যা সিয়াল স্তরের তুলনায় ভারী এবং এর প্রধান খনিজ উপাদানের সিলিকন (Si) ম্যাগনেসিয়াম (Mg) যা সাধারণভাবে সিমা (Sima) ও নামে পরিচিত। অনুমান করা হয় যে, এ ব্যাসল্ট স্তরই সারা পৃথিবী জুড়ে বহিরাবরণ ও গভীর সমুদ্র তলদেশে বিদ্যমান। ভূত্বকের উপরের ভাগেই বাহ্যিক অবয়বগুলো দেখা যায়। যেমন- পর্বত, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি। ভূত্বকের নিচের দিকে প্রতি কিলোমিটারে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ে।
..
গুরুমণ্ডল (Barysphere) : ভূত্বকের নিচে প্রায় ২,৮৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরুমণ্ডলকে গুরুমণ্ডল বলে। গুরুমণ্ডল মূলত ব্যাসন্ট (Basalt) শিলা দ্বারা গঠিত। এ অংশে রয়েছে সিলিকা, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, কাৰ্বন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। গুরুমণ্ডল দুই ভাগে বিভক্ত। (ক) ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডল যা ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মণ্ডল প্রধানত লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ সিলিকেট খনিজ দ্বারা গঠিত। (খ) নিম গুরুমণ্ডল প্রধানত আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এবং সিলিকন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ খনিজ দ্বারা গঠিত।
কেন্দ্রমণ্ডল (Centrosphere ) : গুরুমণ্ডলের ঠিক পরে রয়েছে কেন্দ্রমণ্ডল। গুরুমণ্ডলের নিচ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত এই মণ্ডল বিস্তৃত। এ স্তর প্রায় ৩,৪৮৬ কিলোমিটার পুরু। ভূকম্পন তরঙ্গের সাহায্যে জানা গেছে যে, কেন্দ্রমণ্ডলের একটি তরল বহিরাবরণ আছে, যা প্রায় ২,২৭০ কিলোমিটার পুরু এবং একটি কঠিন অন্তঃভাগ আছে, যা ১,২১৬ কিলোমিটার পুরু। বিজ্ঞানীগণ বিশ্বাস করেন যে, কেন্দ্রমণ্ডলের উপাদানগুলোর মধ্যে লোহা, নিকেল, পারদ ও সিসা রয়েছে। তবে প্রধান উপাদান হলো নিকেল ও লোহা।